কনডেম সেলে নারীর ২৪ বছর: আপিল শুনানি বৃহস্পতিবার

ফাইল ছবি

 

২৬ বছর আগের এক হত্যা মামলায় ২৪ বছর ধরে কারাগারে থাকা শরীফা বেগমের আপিল শুনানির জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) দিন ধার্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

 

বুধবার (৩১ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ শুনানির এদিন ঠিক করেন। আদালতে আজ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

 

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির মামলাটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ২৪ বছর ধরে এই নারী কনডেম সেলে আছেন। দেশের ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে বেশি সময় কনডেম সেলে‌। তার সঙ্গে একই মামলায় আব্দুস সামাদ আজাদ নামে আরেক আসামি এই সময় ধরে কনডেম সেলে। এ মামলাটিতে শুনানি করতে চাই। প্রধান বিচারপতি এসময় মামলাটি আগামীকালের কার্যতালিকায় শীর্ষ ১০ এর মধ্যে রাখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।

 

গত ১ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ফাঁসির দিন গুনে এক নারীর ২৪ বছর’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৬ বছর আগে হত্যা মামলায় শরীফা বেগম যখন কারাগারে যান, মেয়ে সূচী আক্তারের বয়স তিন মাস। কারাগারে কয়েকবার মাকে দেখলেও কখনো ছুঁয়ে দেখা হয়নি তার। মায়ের স্নেহ বোঝার আগেই মায়ের বুকে জড়িয়ে থাকার সুখানুভূতি কেমন তাও জানা নেই। একই অবস্থা মা শরীফারও। কারাগারে যাওয়ার পর আর কখনো সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরা হয়নি তার। কারণ ৫৫ বছরের জীবনের প্রায় ২৪ বছরই ‘মৃত্যু সেলে’ থাকা শরীফার মামলার বিচারই এখনো শেষ হয়নি।

 

১৯৯৮-এ গ্রেফারের পর ২০০০ সালের অক্টোবরে বিচারিক আদালতে তার ফাঁসির রায় হয়। সেই থেকে তিনি ফাঁসির সেলে (কনডেম সেল) বন্দি। ২০০৩ সালে হাইকোর্টে তার সাজা বহাল থাকে। এরপর ২১ বছরেও তার আপিল নিষ্পত্তির তথ্য মেলেনি।

 

এই দীর্ঘ সময় ফাঁসির সেলে থাকা শরীফার কথা আদালত, কারা কর্তৃপক্ষ, অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় কারও মনে আসেনি। এই নারী জানতে পারেননি তিনি দোষী না নির্দোষ।

 

কারা কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, কারা ইতিহাসে আর কোনো নারী আসামিকে এত দীর্ঘ সময় ফাঁসির সেলে থাকতে হয়নি। এত লম্বা সময় (২৬ বছর) কোনো নারী কারাবাসে ছিলেন কি না, সে তথ্যও মেলেনি।

শরীফার মতো জামালপুরের আবদুস সামাদ আজাদ ওরফে সামাদও একই মামলায় গত ২৪ বছর ধরে ফাঁসির সেলে বন্দি। কারা ইতিহাসে তিনিই একমাত্র পুরুষ আসামি যাকে এত দীর্ঘ সময় ফাঁসির সেলে থাকতে হচ্ছে। শেখ জাহিদ নামে খুলনার এক ব্যক্তি ২০ বছর ফাঁসির সেলে থাকার পর ২০২০ সালে ২৫ আগস্ট আপিল বিভাগের আদেশে খালাস ও পরে মুক্তি পান।

 

দেশে গুরুতর ফৌজদারি অপরাধে অনেক নারীর মৃত্যুদণ্ডের মতো কঠোর সাজা হলেও সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগে তা রহিত হয়ে যাবজ্জীবন, খালাস কিংবা অন্য মেয়াদের কারাদণ্ড হয়েছে। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত কোনো নারীর ফাঁসি কার্যকর হয়নি। কিছু ব্যতিক্রম বাদে ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) মামলা সর্বোচ্চ ১৫ বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়। আসামি নারী হলে সে সময় আরও কমে যায়। ফৌজদারি আইন ও সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যাবজ্জীবন সাজা ৩০ বছর হলেও কারাবাসের রেয়াত মিলে সেটি হয় সাড়ে ২২ বছর। কারও বেলায় নানা কারণে সেটি আরও কমে আসে।

এ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর প্রধান বিচারপতি উদ্যোগ নিলে শরীফার আপিল শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসে।  সূএ:জাগোনিউজ২৪.কম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ৫৩ বছর পর দেশ গড়ার এক সুবর্ণ সুযোগ আমাদের এসেছে: মাসুদ সাঈদী

» নির্বাচনে যত দেরি ষড়যন্ত্র তত বাড়বে: তারেক রহমান

» অভিযান চালিয়ে ইয়াবাসহ চারজন মাদক চোরা কারবারি আটক

» সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রস্তাব, যা জানালেন বদিউল আলম

» ২ মার্চ ‘জাতীয় পতাকা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান মঈন খানের

» কোনো নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয়: আইজিপি

» সুন্দর ব্যবহার ও আচরণের বিনিময়ে জান্নাত! হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী।

» বাংলাদেশ ব্যাংকের স্পট লোন পেলেন সিলেটের সিএমএসএমই উদ্যোক্তারা

» ‘ইউসিবি নাইট’ আয়োজনে গ্রাহক ও অংশীদারদের অব্যাহত সহযোগিতার স্বীকৃতি

» ইসলামপুর ওয়ার্ড কৃষক দলের সম্মেলন অনুষ্ঠিত

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

কনডেম সেলে নারীর ২৪ বছর: আপিল শুনানি বৃহস্পতিবার

ফাইল ছবি

 

২৬ বছর আগের এক হত্যা মামলায় ২৪ বছর ধরে কারাগারে থাকা শরীফা বেগমের আপিল শুনানির জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) দিন ধার্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

 

বুধবার (৩১ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ শুনানির এদিন ঠিক করেন। আদালতে আজ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

 

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির মামলাটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ২৪ বছর ধরে এই নারী কনডেম সেলে আছেন। দেশের ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে বেশি সময় কনডেম সেলে‌। তার সঙ্গে একই মামলায় আব্দুস সামাদ আজাদ নামে আরেক আসামি এই সময় ধরে কনডেম সেলে। এ মামলাটিতে শুনানি করতে চাই। প্রধান বিচারপতি এসময় মামলাটি আগামীকালের কার্যতালিকায় শীর্ষ ১০ এর মধ্যে রাখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।

 

গত ১ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ফাঁসির দিন গুনে এক নারীর ২৪ বছর’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৬ বছর আগে হত্যা মামলায় শরীফা বেগম যখন কারাগারে যান, মেয়ে সূচী আক্তারের বয়স তিন মাস। কারাগারে কয়েকবার মাকে দেখলেও কখনো ছুঁয়ে দেখা হয়নি তার। মায়ের স্নেহ বোঝার আগেই মায়ের বুকে জড়িয়ে থাকার সুখানুভূতি কেমন তাও জানা নেই। একই অবস্থা মা শরীফারও। কারাগারে যাওয়ার পর আর কখনো সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরা হয়নি তার। কারণ ৫৫ বছরের জীবনের প্রায় ২৪ বছরই ‘মৃত্যু সেলে’ থাকা শরীফার মামলার বিচারই এখনো শেষ হয়নি।

 

১৯৯৮-এ গ্রেফারের পর ২০০০ সালের অক্টোবরে বিচারিক আদালতে তার ফাঁসির রায় হয়। সেই থেকে তিনি ফাঁসির সেলে (কনডেম সেল) বন্দি। ২০০৩ সালে হাইকোর্টে তার সাজা বহাল থাকে। এরপর ২১ বছরেও তার আপিল নিষ্পত্তির তথ্য মেলেনি।

 

এই দীর্ঘ সময় ফাঁসির সেলে থাকা শরীফার কথা আদালত, কারা কর্তৃপক্ষ, অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় কারও মনে আসেনি। এই নারী জানতে পারেননি তিনি দোষী না নির্দোষ।

 

কারা কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, কারা ইতিহাসে আর কোনো নারী আসামিকে এত দীর্ঘ সময় ফাঁসির সেলে থাকতে হয়নি। এত লম্বা সময় (২৬ বছর) কোনো নারী কারাবাসে ছিলেন কি না, সে তথ্যও মেলেনি।

শরীফার মতো জামালপুরের আবদুস সামাদ আজাদ ওরফে সামাদও একই মামলায় গত ২৪ বছর ধরে ফাঁসির সেলে বন্দি। কারা ইতিহাসে তিনিই একমাত্র পুরুষ আসামি যাকে এত দীর্ঘ সময় ফাঁসির সেলে থাকতে হচ্ছে। শেখ জাহিদ নামে খুলনার এক ব্যক্তি ২০ বছর ফাঁসির সেলে থাকার পর ২০২০ সালে ২৫ আগস্ট আপিল বিভাগের আদেশে খালাস ও পরে মুক্তি পান।

 

দেশে গুরুতর ফৌজদারি অপরাধে অনেক নারীর মৃত্যুদণ্ডের মতো কঠোর সাজা হলেও সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগে তা রহিত হয়ে যাবজ্জীবন, খালাস কিংবা অন্য মেয়াদের কারাদণ্ড হয়েছে। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত কোনো নারীর ফাঁসি কার্যকর হয়নি। কিছু ব্যতিক্রম বাদে ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) মামলা সর্বোচ্চ ১৫ বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়। আসামি নারী হলে সে সময় আরও কমে যায়। ফৌজদারি আইন ও সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যাবজ্জীবন সাজা ৩০ বছর হলেও কারাবাসের রেয়াত মিলে সেটি হয় সাড়ে ২২ বছর। কারও বেলায় নানা কারণে সেটি আরও কমে আসে।

এ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর প্রধান বিচারপতি উদ্যোগ নিলে শরীফার আপিল শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসে।  সূএ:জাগোনিউজ২৪.কম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com